ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় শিশু ফরহাদ (৮) হত্যা মামলায় ৬ জনের ফাঁসি ও একজনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করেছেন আদালত। গতকাল সোমবার দুপুরে ময়মনসিংহে ২য় অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক জহিরুল ইসলাম কবীর এ রায় ঘোষণা করেন।রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে নিহত ফরহাদের পরিবার। দন্ড প্রাপ্তরা হলো মুক্তাগাছা উপজেলার খেরুয়াজানি ইউনিয়নের খেরুয়াজানি গ্রামের সাহেব আলী (৩৫), আব্দুল কুদ্দুস (৬০), ইব্রাহিম (৫৫), আব্দুল মজিদ মধু (৭০), মোন্তাজ আলী (৬০) ও জুয়েল (৩৫) এবং যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হলো কমলা খাতুন (৫০)। ১নং আসামি সাহেব আলী ছাড়া সবাই কারাগারে রয়েছে।মামলার বিবরণে জানা যায়, জমি নিয়ে বিরোধ ও এলাকায় জুয়া খেলাকে কেন্দ্র করে মুক্তাগাছা উপজেলার খেরুয়াজানি ইউনিয়নের খেরুয়াজানি গ্রামের আইয়ুব আলীর সাথে আসামিদের বিরোধ ছিল।২০১০ সালের ৭ মে আসামিরা আইয়ুব আলীর শিশু পুত্র ফরহাদকে (৮) হত্যা করে। হত্যার আগে ফরহাদের হাত-পা ও জিহ্বা কেটে ফেলে। চোখ তুলে নেয় ও পেট কেটে নাড়ী বের করে। বর্বর এ হত্যার পর লাশ একটি পুকুরের পাশে ফেলে রাখে। অনেক খোজাখুঁজি করে দু'দিন পর পরিবারের লোকজন শিশু ফরহাদের গলিত মরদেহ ওই গর্ত থেকে উদ্ধার করে। পরে ফরহাদের পিতা আইয়ুব আলী বাদী হয়ে মুক্তাগাছা থানায় ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। পরে পুলিশ এই হত্যা মামলা তদন্তে অভিযানে নামে। পুলিশ জানায়, প্রথমে এই মামলার একমাত্র নারী আসামি কমলা খাতুনকে আটক করতে সক্ষম হয়। পুলিশ কমলা খাতুনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এই খুনের কথা স্বীকার করে। আদালতে ১৬৪ ধারায় কমলা জবানবন্দি দেয়। কমলার দেয়া তথ্যানুযায়ী মামলার এক আসামিকে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় পুলিশ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। এর মধ্যে অন্য পাঁচ আসামি হাইকোর্ট থেকে জামিনে আসে। পুলিশ আটক আাসামিদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তদন্ত শেষে সাজাপ্রাপ্ত সাত আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে। পরে জামিনে থাকা আসামিরা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে হাজির হলে তাদের জামিন নামজুর করা হয়। কিন্তু এক নং আসামি সাহেব আলী এখনও পলাতক রয়ে গেছে।রায়ের পর নিহত ফরহাদের বাবা আইয়ুব আলী তার প্রতিক্রিয়ায় সংবাদকে জানান, উপযুক্ত বিচার পাওয়ায় তিনি ও তার পরিবার খুব খুশি এবং এলাকাবাসীও এদের হাত থেকে মুক্তি পাবে। আইয়ুব আরও জানান, আসামিরা এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত ছিল। শিশু ফরহাদ হত্যার ঘটনার আগে আসামিরা তার বাড়ির সামনে জুয়ার বোর্ড বসিয়ে দিনরাত জুয়া চালিয়ে আসলে সে বাধা প্রদান করে। সে কারণে আসামিরা ওই সময় তার বাড়িঘর ভাঙচুর করেছিল। তখনও সে এদের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা দায়ের করেছিল। কিন্তু ওই মামলায় তাদের কিছু হয়নি। পরে আসামিরা ক্ষিপ্ত হয়ে এই ঘটনা ঘটায়। ঘটনার দিন আসামি কমলা খাতুন ও তার ছেলে ফরহাদকে তাদের বাড়ি থেক লিচু দেয়ার কথা বলে ফুসলিয়ে বাড়ি থেকে নিয়ে যায়। পরে আর তাকে পাওয়া যায়নি। পরে অত্যন্ত বর্বরোচিতভাবে ফরহাদের হাত-পা, জিহ্বা কেটে, চোখ তুলে ও পেট কেটে নাড়ি বেড় করে। হত্যার পর শিশু ফরহাদকে আইয়ুবের বাড়ির প্রায় ৫ শত গজ উত্তরে একটি ফিশারির কাছে ঝোপের মধ্যে ফেলে রাখে।পেশায় রাজমিস্ত্রী আইয়ুব আলীর ২ ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে ফরহাদ ছিল তৃতীয় সন্তান। ফরহাদ দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ত। পড়ালেখায় আগ্রহ থাকায় ফরহাদকে নিয়ে আইয়ুব আলীর স্বপ্ন ছিল তাকে পড়ালেখা করিয়ে বড় অফিসার বানাবে।আইয়ুব আলী আরও জানায়, ১নং আসামিকে পুলিশ ধরতে না পারায় এখন সে আমাকে ও আমার বড় ছেলেকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 Comment Blogger 0 Facebook
Post a Comment
আপনার একটি মন্তব্য লেখককে অনুপ্রানিত করে ,মনোবল বাড়ায় এবং ভবিষৎতে ভাল কিছু উপহার দেয় । তাই পোষ্টটি কেমন হয়েছে জানাবেন । আপনার মন্তব্য আমরা যথাসম্ভব উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো ।