অস্ট্রেলিয়া দল আসবে না জেনে যুক্তরাষ্ট্র চলে গিয়েছিলেন সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর পাশে থাকতে। জিম্বাবুয়ে আসছে বলে সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে রেখেই ফিরে এলেন দেশে। তাহলে প্রথম সন্তানের পৃথিবীর আলো দেখার মুহূর্তে সাকিব আল হাসান স্ত্রী শিশিরের পাশে থাকবেন না?

উত্তর জানে শুধু অদৃষ্ট। তবে মানুষ সব সময় ভালোটাই আশা করে। সাকিবের আশায়ও সে রকমই ‘ভালো’র ছড়াছড়ি। জিম্বাবুয়েকে দোর্দণ্ড প্রতাপে হারিয়ে ঠিকই সময়মতো পৌঁছে যেতে চান স্ত্রীর পাশে। দেখতে চান পৃথিবী আলো করে আসা ‘রাজকন্যা’কে।

সাকিবের বাবা হওয়ার সম্ভাব্য তারিখ এখন পর্যন্ত এ মাসের তৃতীয় সপ্তাহে। তত দিনে জিম্বাবুয়ে সিরিজ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। সে ক্ষেত্রে সিরিজের পর পরই তিনি আবার যুক্তরাষ্ট্রে উড়ে যাবেন। আর যদি যুক্তরাষ্ট্র থেকে আকস্মিক কোনো বার্তা আসে, তাহলে চলে যেতে হতে পারে সিরিজ অসমাপ্ত রেখেই। মোট কথা দেশের হয়ে খেলা এবং প্রথম সন্তানের মুখ দেখা—দুটিকেই সমান পাল্লায় রাখছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। সাকিবের ভাষায়, ‘সব সময়ই ওখানে (যুক্তরাষ্ট্র) কথা হচ্ছে। কোনো সমস্যা নেই, ও সুস্থ আছে। টেনশনের কিছু নেই। ভালোভাবে সিরিজটা শেষ করে যেতে পারলে ভালো লাগবে।’

এ রকম স্পর্শকাতর সময়ে খেলার জন্য স্ত্রীকে এত দূরে রেখে আসাটা সাহসিকতার কাজ। সাকিব সে কাজে মানসিক সমর্থন পেয়েছেন স্বয়ং স্ত্রীর কাছ থেকেই, ‘আমার স্ত্রীর সাহায্যটাই ছিল বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সে-ই আমাকে বলেছে, “তুমি যাও। যদি জরুরি কিছু হয়, তাহলে চলে এসো। না হলে স্বাভাবিক সময়ে তো আসতেই পারছ।” ওর কারণেই আসলে আসা হয়েছে দেশে।’

সঙ্গে খেলার প্রতি টান তো আছেই। নইলে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার সময়ই সাকিব কেন বিসিবিকে জানিয়ে যাবেন, ‘নভেম্বরে জিম্বাবুয়ে সিরিজটা হলে খেলতে চাই।’ সেই সিরিজ খেলতে এসে সাকিবের মধ্যে এখন রোমাঞ্চ-ই জাগছে। ‘এখন সিরিজ আছে, এটা নিয়েই বেশি রোমাঞ্চিত। আর ওটা নিয়ে তো রোমাঞ্চিত আছিই। রোমাঞ্চের মাত্রা তাই একটু বেশি’—মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে অনুশীলন শেষ করে বলছিলেন হাসতে হাসতে।

অস্ট্রেলিয়ার সফর বাতিল করার সিদ্ধান্ত শুনে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন হতাশা নিয়ে। বাংলাদেশে ক্রিকেটের নিরাপত্তা নিয়ে যখন বড় দেশগুলো প্রশ্ন তুলছে, তখন জিম্বাবুয়ে দলের বাংলাদেশ সফরের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছেন সাকিব, ‘আমাদের এই সময়ে জিম্বাবুয়ে বড় একটা সাহায্য করল। যেহেতু একটা দেশ সফর বাতিল করেছে, একটু অনিশ্চয়তা ছিলই। কিন্তু আমরা কখনোই মনে করি না বাংলাদেশে এ ধরনের কোনো সমস্যা আছে। বিশেষ করে ক্রিকেটে তো নিরাপত্তার কোনো সমস্যাই নেই। সেদিক থেকে আমি খুশি যে জিম্বাবুয়ে আসল। আমি কখনোই মনে করি না যে ক্রিকেট নিয়ে নিরাপত্তার কোনো সমস্যা আমাদের ছিল বা কখনো হওয়ার সম্ভাবনা আছে।’

কাল সন্ধ্যায় সাকিব যখন কথাগুলো বলছিলেন, তার ঘণ্টা খানেক আগেই তিন ওয়ানডে ও দুই টি-টোয়েন্টির সিরিজ খেলতে ঢাকায় পৌঁছে গেছে জিম্বাবুয়ে দল। বাংলাদেশের বিপক্ষে পারফরম্যান্স এখন এমনিতেই তাদের ভালো হয় না। তার ওপর এবার দলটা এসেছে ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের কাছে সিরিজ হেরে। তবে জিম্বাবুয়ে কার সঙ্গে হারল কার সঙ্গে জিতল সেটা এখন আর বাংলাদেশের বিবেচ্য নয়। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জেতা এখন তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। নতুন সিরিজের লক্ষ্যটা তাই হয় আরও ভালোভাবে জেতার। এবারও সিরিজ শুরুর আগে সাকিব ঘোষণা দিয়ে দিলেন, ‘লক্ষ্য থাকবে যেন ওদের ওপর কর্তৃত্ব করতে পারি। চ্যালেঞ্জটা আসলে সময়ের সঙ্গে পাল্টায়। যেহেতু আমরা ওদের বিপক্ষে নিয়মিতই জিতছি, এবার লক্ষ্য থাকবে শাসন করে জেতার। বড় দলগুলো ছোট দলগুলোর সঙ্গে যেভাবে খেলে, ওদের সঙ্গে আমরা সেভাবেই খেলতে চাইব।’

বাংলাদেশের ক্রিকেটে ২০১৫ সালটা তাহলেই হবে আরও স্মরণযোগ্য। সন্তান জন্ম দেওয়ার সময়ে শিশির দেখতে পাবেন স্বামীর হাসিমুখটাও। সাকিবকে তিনিই নাকি বলেছেন, ‘তুমি এখানে বসে বসে খেলা দেখলে চেহারার যে অবস্থা হবে, সেটা আমার দেখতে ভালো লাগবে না। তার চেয়ে তুমি গিয়ে খেলো।’

0 Comment Blogger 0 Facebook

Post a Comment

আপনার একটি মন্তব্য লেখককে অনুপ্রানিত করে ,মনোবল বাড়ায় এবং ভবিষৎতে ভাল কিছু উপহার দেয় । তাই পোষ্টটি কেমন হয়েছে জানাবেন । আপনার মন্তব্য আমরা যথাসম্ভব উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো ।

 
SUNINBD © 2013. All Rights Reserved. Powered by Blogger
Top