আমার এই টিউনটি মূলত হোস্টিং নিয়ে। কিন্তু হোস্টিং এর সাথে যেহেতু ডোমেইনও জড়িত, তাই ডোমেইন নিয়ে ক্ষুদ্র একটু আলোচনা করলাম।
ডোমেইন কি?
ধরা যাক আমি ওয়েবসাইট তৈরি করলাম। এখন এই ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য ভিজিটরদের একটা ঠিকানা জানতে হবে। আর এই ঠিকানাটাই হচ্ছে ডোমেইন নেম। ডোমেইন নেমই আমার ওয়েবসাইটকে অন্য ওয়েবসাইট থেকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করবে। তাই ডোমেইন নেম হয় ইউনিক, যা পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি নেই।
হোস্টিং কি?
ধরা যাক আমি কয়েকটা এইচটিএমএল পেজ দিয়ে একটা ওয়েবসাইট তৈরি করলাম। এখন সেগুলো অনলাইনে রাখতে হবে তে ভিজিটররা সেগুলো যখন খুশি চাইলেই দেখতে পারে। স্বাভাবিকভাবেই আমি জানিনা তারা কে কখন আমার সাইটে আসবে। সুতরাং আমার ঐ উপরোক্ত পেজগুলো এমন একটা কম্পিউটারে(বা সার্ভারে) রাখতে হবে যেটা ২৪ ঘন্টাই অনলাইনে থাকবে। ২৪ ঘন্টা অনলাইনে রাখার জন্য দরকার হবে ২৪ ঘন্টা নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ, হাই স্পীডের ইন্টারনেট লাইন (কমপক্ষে ১০০ এমবিপিএস। বাংলাদেশের ঠেলাগাড়ি মার্কা ২৫-৩০ কিলোবাইট কোন কাজেই আসবে না), নিরাপত্তা ইত্যাদি। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন আসে একটা ওয়েবসাইট চালাতে এত খরচ লাগবে, এত ঝামেলা করা লাগবে? উত্তর হবে “না”। কিছু মানুষ আছে যারা উপরোক্ত কাজগুলো নিজেরাই করে দিবে। অনলাইনে এরাই আপনার-আমার ফাইলগুলো যত্নের সাথে রাখবে। আর যারা এই ফাইলগুলো রাখবে তাদের বলে হোস্ট। আর তারা যে সার্ভিসটা দিচ্ছে সেটাই হচ্ছে হোস্টিং সার্ভিস।
হোস্টিং এর প্রকারভেদ
হোস্টিং তিনপ্রকারের হয়ে থাকে
১. শেয়ার্ড হোস্টিং
২. ভিপিএস
৩. ডেডিকেটেট সার্ভার
১. শেয়ার্ড হোস্টিং:
হোস্টিং কোম্পানীগুলো সাধারণত যে হোস্টিং এর অফার করে থাকে তাই হচ্ছে শেয়ার্ড হোস্টিং। আমি এখানে নিজের ইচ্ছেমত কোন সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারব না। হোস্টিং কোম্পানী আমাকে যা সফটওয়্যার ব্যবহার করতে দেয় তাই আমাকে ব্যবহার করতে হবে। শেয়ার্ড হোস্টিং কি রকম হয় তা একটা উদাহরণ দিলে পরিস্কার হবে।
একটি সিম্পল প্যাকেজের উদাহরণ
Web Space: 200MB
Bandwidth: 1000MB
E-mail Accounts: 10
MySQL Databases: 10
FTP Accounts: 5
Addon Domains: 5
Sub-Domains: 5
এবার দেখা যাক কোনটা কি কাজে লাগে।
Web Space: এটা হচ্ছে অনলাইনে আমার স্টোরেজের পরিমাণ। যেমন উপরের উদাহরণে দেয়া আছে ওয়েব স্পেস এর পরিমাণ ২০০ মেগা। এখন এই ২০০ মেগার মাঝেই আমাকে আমার সব ফাইল রাখতে হবে। আমি আমার ইচ্ছামত ফাইল রাখতে ও ডিলেট করতে পারবেন। কিন্তু তার সর্বোচ্চ সীমা হবে ২০০ মেগা।
Bandwidth: ব্যান্ডউইডথ হচ্ছে একমাসে সর্বমোট ডাটা ট্রান্সফারের পরিমাণ। অনেকে ওয়েব স্পেস এর সাথে ব্যান্ডউইডথ কে গুলিয়ে ফেলেন। একটা উদাহরণ দিলেই আশা রাখি বিষয়টা বোঝা সহজ হবে। ধরা যাক আমি আমার সাইটে ১ মেগাবাইটের একটা ফাইল রাখলাম। এতে আমার ওয়েব স্পেস কমল ১ মেগাবাইট। এখন এই ফাইলটি ১০০ জন ব্যবহারকারী যদি একবার করে ডাউনলোড করে তবে আমার তবে আমার ব্যান্ডউইডথ খরচ হবে ১০০*১=১০০ মেগা। ১০০ জন ব্যবহারকারী যদি ২ বার করে ডাউনলোড করে তবে খরচ হবে ১০০*২=২০০ মেগা। সাইটের জনপ্রিয়তার উপর নির্ভর করে ব্যান্ডউইডথ নেয়া উচিত।
E-mail Accounts: অনেক সময় এরকম ইমেইল ঠিকানা দেখা যায mail@dokhinermahbub.com । অর্থাৎ থার্ডপার্টি(ইয়াহু, জিমেইল, হটমেইল) ব্যবহার না করে আপনার নিজস্ব ডোমেইন এর আন্ডারে ইমেইল ঠিকানা। সংখ্যা দ্বারা নির্দেশ করবে এরকম একাউন্ট আমি কয়টা খুলতে পারব। যেমন উপরের উদাহরণ অনুসারে ইমেইল ঠিকানা খোলা যাবে ১০ টি।
MySQL Databases: ডাইনামিক সাইট (যেমন জুমলা, ওয়ার্ডপ্রেস, পানবিবি) তৈরি করার জন্য ডাটাবেজ ব্যবহার হয়। সংখ্যা দ্বারা নির্দেশ করে আমি কয়টি ডাটাবেস ব্যবহার করতে পারব।
FTP Accounts: ব্রাউজার ছাড়াও সাইটের ফাইলগুলো ম্যানেজ করা যায় এফটিপি ক্লায়েন্ট (ফাইলজিলা) এর মাধ্যমে।আমি কয়টি এরকম একাউন্ড খুলতে পারব তা সংখ্যা দ্বারা নির্দেশ করবে।
Sub-Domains: বিভিন্ন সময় আমরা দেখতে পাই একটি ডোমেন এর আন্ডারে অনেকগুলো সাইট। যেমন http://forum.projanmo.com, http://rupantor.projanmo.comইত্যাদি। এগুলোকে বলে সাব-ডোমেইন। সর্বোচ্চ কয়টি সাবডোমেন ব্যবহার করতে পারব তা হোস্টিং কোম্পানী আমাকে নির্ধারন করে দিবে।
একটা সার্ভারে কয়েকশত থেকে কয়েকহাজার ওয়েবসাইট থাকতে পারে একটা শেয়ার্ড হোস্টিং এ। একগুলো সাইট একসাথে রাখার কারণ হচ্ছে সবগুলো সাইটে একই সময়ে হিট পড়ে না (লোড হয় না)[বাসায় ১০ জনের জন্য একটা বাথরুম ব্যবহারের মত]। তবে কোন সাইটে যদি যদি খুব বেশী পরিমাণ হিট পড়ে তখন শেয়ার্ড হোস্টিং দিয়ে আর কাজ হয় না।
ডেডিকেটেড সার্ভারঃ
[উপরের আলোচনার সূত্র ধরে] শেয়ার্ড হোস্টিং দিয়ে যখন কাজ হয় না, সাইট স্ট্যাটিক এর বদলে যখন ডায়নামিক হয়, ডেটাবেস ব্যবহার করা হয়, সাইটের ভিজিটর কয়েক হাজার হলেই দরকার হয় নিজস্ব একটা সার্ভার। যা অন্য কেউ শেয়ার করবে না। সব রিসোর্স নিজস্ব।
0 Comment Blogger 0 Facebook
Post a Comment
আপনার একটি মন্তব্য লেখককে অনুপ্রানিত করে ,মনোবল বাড়ায় এবং ভবিষৎতে ভাল কিছু উপহার দেয় । তাই পোষ্টটি কেমন হয়েছে জানাবেন । আপনার মন্তব্য আমরা যথাসম্ভব উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো ।